অপারেটিং সিস্টেম কি?
Operating System
একজন প্রতিষ্ঠানপ্রধানই পারে একটি প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে। তেমনি কম্পিউটারকে সঠিকভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন অপারেটিং সিস্টেম, যা সিস্টেম সফটওয়্যার নামে পরিচিত। কম্পিউটারকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যে প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রাম সমষ্টি ব্যবহার করা হয় তাকে অপরেটিং সিস্টেম বলা হয়। এটি কম্পিউটারের ইনপুট ও আউটপুট হার্ডওয়্যার এবং আ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের সাথে সেতুবন্ধ রক্ষা করে ব্যবহারকারীর নির্দেশ অনুযায়ী ডেটা গ্রহণ করে, প্রক্রিয়াকরণ করে এবং প্রক্রিয়াকরণের পর প্রাপ্ত ফলাফল প্রদানে সহায়তা করে। এককথায় অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সাথে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সংযোগ স্থাপন করে বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করে।
আমেরিকান ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইনস্টিউটের (American National Standard Institute-ANSI) মতে, ‘যে সফটওয়্যার কম্পিউটার প্রোগ্রামের এক্সিকিউশন নিয়ন্ত্রণ করে এবং শিডিউলিং, ডিবাগিং, ইনপুট/আউটপুট নিয়ন্ত্রণ, অ্যাকাউন্টিং, কম্পাইলেশন, তথ্যাবলি সংরক্ষণ, কার্যক্রম, তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং আনুষঙ্গিক কাজসমূহ করে থাকে তাকে অপারেটিং সিস্টেম বলে।’ (Software which controls the execution of computer programs and which may provide scheduling, debugging, input/output control, accounting, compilation, storage assignment, data management and related services.) আরো সহজভাবে বলা যায়, অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে এমন এক ধরনের প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রাম সমষ্টি, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব সময় নির্বাহ হয় এবং অন্যান্য প্রোগ্রামের নির্বাহের পরিবেশ তৈরি করে।
১৯৫১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মটর রিসার্চ ল্যাবরেটরি কর্তৃক ওইগ কর্পোরেশনের জন্য সর্বপ্রথম অপারেটিং সিস্টেম আবিষ্কৃত হয়। এটি তখন মেইনফ্রেম কম্পিউটারে ব্যবহার করা হত। ১৯৭১ সালে মাইক্রোকম্পিউটারের জন্য তৈরি প্রথম অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে CP/M। কম্পিউটার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অপারেটিং সিস্টেমসমূহ হলো- MS-DOS or PC-DOS, WINDOWS 95/98/2000/XP/7, OS/2, UNIX, LINUX, MAC OS, Solaries, XENIX, WINDOWS NT ইত্যাদি।
অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্ব
Importance of Operating System
অন্যান্য সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামের ন্যায় অপারেটিং সিস্টেমও এক ধরনের সফটওয়্যার। কম্পিউটার সিস্টেম জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কম্পিউটার বুটিং করা থেকে শুরু করে কম্পিউটার বন্ধ করা পর্যন্ত সকল কাজই অপারেটিং সিস্টেমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের ব্যবহার সহজ করে দিয়েছে। ফলে এখন সাধারণ মানুষের পক্ষেও কম্পিউটার ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেমের কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে। অপারেটিং সিস্টেম হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করে। কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ কাজগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। হার্ডওয়্যার দিয়ে যাবতীয় কাজ করানোর দায়িত্ব ব্যবহারকারীর পরিবর্তে অপারেটিং সিস্টেম পালন করে। কম্পিউটারে সব ধরনের সফটওয়্যার থাকলেও অপারেটিং সিস্টেম ব্যতীত এটি কোনো কাজ করে না। কম্পিউটারে সম্পাদিত তথ্যাবলি সংরক্ষণ, ফাইল সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি নির্ণয়, সিস্টেম বণ্টন, তত্ত্বাবধান, ইনপুট ও আউটপুট অপারেশন, প্রোগ্রাম পরিচালনা- সর্বোপরি কম্পিউটারের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদনে অপারেটিং সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কম্পিউটার পরিচালনার জন্য অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।
অপারেটিং সিস্টেমের কার্যাবলি
Functions of Operating System
কম্পিউটারের মূল অবকাঠামো হলো হার্ডওয়্যার। সফটওয়্যার হলো কম্পিউটারের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদনের হাতিয়ার। ব্যবহারকারীর নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন হার্ডওয়্যার দিয়ে সফটওয়্যারের সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব পালন করে অপারেটিং সিস্টেম। অপারেটিং সিস্টেম অনেকগুলো প্রোগ্রাম নিয়ে গঠিত একটি সমন্বিত সফটওয়্যার। অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত প্রোগ্রামগুলো কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরণের কাজ সম্পূর্ণ করে। নিম্নে অপারেটিং সিস্টেমের কাজগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলো-
ইউজার ইন্টারফেস :
অপারেটিং সিস্টেম ইউজার ইন্টারফেসের মাধ্যমে বিভিন্ন সফটওয়্যারের সংযোগ, সমন্বয় সাধন, পরিচালনা ও নির্দেশ গ্রহণে সাহায্যে করে। অপারেটিং সিস্টেমে সাধারণত তিন ধরনের ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহৃত হয়। যথা- কমান্ডচালিত, মেনুচালিত ও গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস।
ইউজার ম্যানেজমেন্ট :
অপারেটিং সিস্টেম নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার সাহায্যে এক বা একাধিক ব্যবহারকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ডেটা বা প্রোগ্রামে প্রবেশ করার সুযোগ দেয়। ব্যবহারকারীদের ফাইল পড়া এবং তাতে লেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য ব্যবহারকারীদের আলাদা আলাদা অ্যাকসেস বা প্রবেশাধিকার দিতে পারে। প্রবেশাধিকারে বিভিন্ন স্তর রয়েছে এবং প্রতিটি স্তর ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে। আর এ সবই সম্পাদিত হয় অপারেটিং সিস্টেমের সহায়তায়।
ইনপুট-আউটপুট ম্যানেজমেন্ট :
অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ইনপুট, আউটপুট যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা। বিভিন্ন প্রোগ্রাম কীভাবে কি-বোর্ড, মাউস, প্রিন্টার ও অন্যান্য হার্ডওয়্যারের সাথে এবং বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যারের সাথে কাজ করবে তার সমন্বয় সাধন করে। এটি ইনপুট, আউটপুট ও অন্য হার্ডওয়্যারগুলোর নিয়ন্ত্রণ, অবস্থা পর্যবেক্ষণ ত্রুটি নির্ণয়করণ এবং সমন্বয় সাধন করে।
টাস্ক ম্যানেজমেন্ট :
অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীর নির্দেশ গ্রহণ, বিশ্লেষণ ও কার্যকর করে এবং সঠিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারিক প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পাদনে যাতে কোনো প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেজন্য অপারেটিং সিস্টেম সিপিইউয়ের টাইম স্লাইসকে বিভিন্ন টাস্কের মধ্যে বণ্টন করে এবং ইন্টারাপ্ট কন্ট্রোল করে যাতে সকল টাস্কই সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট :
কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন কাজসমূহকে সহজ করার জন্যই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। রিসোর্স শেয়ার বলতে এখানে তথ্য, সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার শেয়ারিং বোঝায়। এক কম্পিউটারে রক্ষিত ডেটা বা তথ্য অন্য কম্পিউটার দেখা যেতে পারে যদি সেই তথ্য শেয়ার করা থাকে এবং উপযুক্ত পারমিশন দেওয়া হয়। তেমনি এক কম্পিউটারের সাথে যুক্ত হার্ডওয়্যার ডিভাইস যেমন- প্রিন্টার, সিডিরম ড্রাইভ, হার্ডডিস্ক স্পেস, স্ক্যানার ইত্যাদি অন্য কম্পিউটারের সাথে শেয়ার করা যেতে পারে। আর এ সবই সঠিকভাবে হয়ে থাকে অপারেটিং সিস্টেমের রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সাহায্যে।
মেমরি ম্যানেজমেন্ট :
অপারেটিং সিস্টেম সঠিকভাবে মেমরি ম্যানেজমেন্ট করে কম্পিউটারের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। কম্পিউটার পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কমান্ডসমূহ প্রধান মেমরিতে সংরক্ষণ এবং নির্দেশ অনুযায়ী কার্যাবলি সম্পাদন করে। অর্থাৎ তথ্য কীভাবে মেমরিতে সংরক্ষিত হবে বা মেমরি হতে কীভাবে উত্তোলিত হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রয়োজনে তথ্যসমূহ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য সহায়ক মেমরি ব্যবহার করে।
ফাইল ম্যানেজমেন্ট :
অপারেটিং সিস্টেম ফাইল তৈরি, ডিলেট, অ্যাকসেস, কপি, মুভ, সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজ করে থাকে। তাছাড়া ফাইলের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান, সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজও করে থাকে।
কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট :
দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করে তাদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করাই হলো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। অপারেটিং সিস্টেম নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নেটওয়ার্কযুক্ত কম্পিউটারসমূহের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানে সহায়তা করে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রতিটি কম্পিউটার ও রিসোর্স যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারে অপারেটিং সিস্টেম তার ব্যবস্থাপনাও করে থাকে।
ইউটিলিটিস :
অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটিস সুবিধা প্রদান করে থাকে যেমন- ফাইল ডিফ্রাগমেনেটশন, ডেটা কম্প্রেশন, ব্যাক আপ, ডেটা রিকভারি, অ্যান্টিভাইরাস ইত্যাদি।
সিকিউরিটি :
কম্পিউটারের ডেটা বা তথ্যসমূহ নিরাপদে সংরক্ষিত থাকলে অবাঞ্ছিত ব্যবহার হয় না কিংবা ডেটা চুরি বা নষ্ট হয় না। অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের রিসোর্সকে অনাকাঙিক্ষত ব্যবহারকারীর হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া অপারেটিং সিস্টেম প্রোগ্রাম ধারাবাহিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ এবং নেটওয়ার্কের অন্যান্য সুবিধা প্রদান ইত্যাদি কাজ করে থাকে।
0 comments:
Post a Comment